মহান স্বাধীনতা দিবস: বাঙালির অস্তিত্বের সংগ্রাম ও গৌরবের প্রতীক

২৬ মার্চ—একটি রক্তঝরা ইতিহাসের নাম

যেদিন বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা অধ্যায়। চলুন ফিরে দেখা যাক সেই গৌরবময় ইতিহাসের পাতাগুলো।


ইতিহাসের প্রেক্ষাপট: কেন এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ?

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে থাকে। ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ছয় দফা (১৯৬৬), গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯)—এসব সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা জাগ্রত হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় পাকিস্তানি শাসকদের ভীত করে তোলে।  


২৫ মার্চ ১৯৭১

অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে চালায় নারকীয় গণহত্যা। মধ্যরাতেই গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিব এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন:  

"আমি মেজর জিয়া বলছি... বাংলার মুক্তি সংগ্রাম চলছে।"


মুক্তিযুদ্ধ: ৯ মাসের রক্তস্নাত পথ:

২৬ মার্চের ঘোষণা ছিল যুদ্ধের সূচনামাত্র। ৯ মাস ধরে চলা মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ মা-বোনের ত্যাগ, এবং কোটি বাঙালির অসীম সাহসিকতা তৈরি করেছিল একটি স্বাধীন দেশ। মুক্তিবাহিনী, সাধারণ জনতা এবং ভারতের সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের **১৬ ডিসেম্বর** পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।


স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য:

১. গৌরবের স্মরণ: শহীদদের আত্মত্যাগ, মায়ের অশ্রু আর বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই দিন আমাদের অস্তিত্বের পরিচয়।  

২. জাতীয় ঐক্য: ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করানোর শিক্ষা দেয় এই দিন।  

৩. ভবিষ্যতের পথনির্দেশ: স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার।  


কীভাবে পালিত হয় দিনটি?

জাতীয় পতাকা উত্তোলন: ঘর-বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শোভা পায় লাল-সবুজ।  

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: দেশের গান, কবিতা, নাটক ও আলোচনায় মুখরিত হয় স্কুল-কলেজ থেকে মাঠঘাট।  

ডকুমেন্টারি ও চলচ্চিত্র: মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।  


আসুন, স্বাধীনতার মর্মার্থ বুঝে নিই। শোষণমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাই।


🇧🇩 সকল শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা, স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

No comments:

Post a Comment

AI যুগের প্রতিচিন্তা AI যুগের প্রতিচিন্তা: প্রযুক্তির অগ্রগতি না কি এক মহা ফিতনার পূর্বাভাস? Writer: Md. Ab...