আহলান সাহলান মাহে রমাদান

 

পবিত্র মাহে রমজান: রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস

রমজান হল ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র মাস, যা আত্মশুদ্ধি, সংযম ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মোক্ষম সুযোগ এনে দেয়। এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির নবম মাস, যখন সারা বিশ্বের মুসলমানরা রোজা পালন করেন।

রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

রমজান মাসে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত ও আলোর দিশারী। এই মাসে রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়।" (বুখারি ও মুসলিম)


রমজানের তিন দশকের তাৎপর্য

রমজানকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:

  1. প্রথম দশক – রহমতের দশক:এই সময়ে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া লাভের সুযোগ বেশি থাকে।
  2. দ্বিতীয় দশক – মাগফিরাতের দশক: এটি গুনাহ মাফের সময়, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।
  3. তৃতীয় দশক – নাজাতের দশক: শেষ দশকে রয়েছে শবে কদরের রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

রোজার নিয়ম ও শর্তাবলি

রোজার ফরজ বিধান

  • সুবহে সাদিকের পূর্বে সাহরি খাওয়া।
  • সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যাবতীয় কামাচার থেকে বিরত থাকা।
  • নিয়ত করা (মনের মধ্যে সংকল্প থাকাই যথেষ্ট)।

রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ

  • ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা।
  • স্ত্রী সহবাস করা।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।

রমজানের বিশেষ আমল

রমজান মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো:

  1. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তাহাজ্জুদ পড়া
  2. তারাবিহ নামাজ আদায় করা
  3. কুরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা
  4. সাদাকা ও দান-খয়রাত করা
  5. ইস্তেগফার ও দোয়া করা

শবে কদরের গুরুত্ব

শবে কদর (লাইলাতুল কদর) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটিতে হয়ে থাকে। এটি এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

আল্লাহ বলেন:
"আমি একে কদরের রাতে নাযিল করেছি। তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।" (সুরা কদর)


রমজানের দান-সদকার গুরুত্ব

রাসুল (সা.) বলেছেন:
"সর্বোত্তম দান হলো রমজান মাসে দান করা।" (তিরমিজি)

রমজানে ফিতরা, জাকাত ও অন্যান্য দান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা গরিব-দুঃখীদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনে।


ঈদুল ফিতর: আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার উৎসব

রমজান শেষে আসে খুশির দিন ঈদুল ফিতর। এটি সংযম ও ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহারস্বরূপ। এই দিনে নামাজ আদায়, নতুন পোশাক পরিধান ও গরিবদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করা সুন্নত।


উপসংহার

রমজান শুধু রোজা রাখার মাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের বরকতপূর্ণ সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন। আমিন!

আহলান সাহলান মাহে রমাদান

সকলকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।