তিস্তা সংকট: উত্তরণের পথ খুঁজে বাংলাদেশ
ভূমিকা
তিস্তা নদী কেবল পানি প্রবাহ নয়—এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রাণ। কিন্তু এই প্রাণস্পন্দন আজ মৃত্যুপুরীর দিকে এগোচ্ছে। বন্যার সময় তিস্তার উন্মত্ততা আর শুকনো মৌসুমে তার শীর্ণ কঙ্কালসার রূপ লাখো মানুষের জীবনকে বিষাদে ডুবিয়েছে। এই ব্লগে তিস্তার বর্তমান সংকট, এর পিছনের কারণ এবং উত্তরণের সম্ভাব্য পথ খুঁজব।
১. তিস্তা: ইতিহাস ও ভূ-রাজনীতি
ক. নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ
- উৎস: সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল → পশ্চিমবঙ্গ → বাংলাদেশের লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা জেলা দিয়ে প্রবাহিত → শেষে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত।
- দৈর্ঘ্য: ৩১৫ কিমি (ভারতে ১৫০ কিমি, বাংলাদেশে ১৬৫ কিমি)।
খ. চুক্তির ইতিহাস
- ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তি: ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টনের উদাহরণ, কিন্তু তিস্তা চুক্তি আজও অমীমাংসিত।
- ২০১১ সালের অঘোষিত চুক্তি: ভারত ৫৫%, বাংলাদেশ ৪৫% পানির প্রস্তাব দেয়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতায় চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি।
২. তিস্তা তীরের মানুষের দুঃখগাথা
ক. বন্যার সময়ের ধ্বংসযজ্ঞ
- প্রতি বছর বন্যায় তিস্তার পাড় ভেঙে ৫০০+ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয় (বিবিএস, ২০২৩)।
- ফসলের ক্ষতি: বছরে গড়ে ২২ হাজার হেক্টর জমি প্লাবিত, ক্ষয়ক্ষতি ১,২০০ কোটি টাকা।
৩. তিস্তা সংকটের মূল কারণ
ক. ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ
- গজলডোবা বাঁধ: পশ্চিমবঙ্গের এই বাঁধে ৮৫% পানি আটকে দেওয়া হয় শুকনো মৌসুমে।
- টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাব: ভূটান-ভারত সীমান্তে নির্মাণাধীন এই বাঁধ তিস্তার প্রবাহ আরও কমাবে।
৪. সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব
- রংপুরে গত ৫ বছরে ২৫০+ কৃষক ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন (স্থানীয় এনজিও রিপোর্ট)।
- তিস্তা পাড়ের ৩০% যুবক ঢাকা বা ভারতে দিনমজুরি করতে বাধ্য।
৫. উত্তরণের পথ: সম্ভাব্য সমাধান
ক. কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার
- অন্তর্বর্তী চুক্তি: ভারতের সাথে অস্থায়ী পানিবণ্টন চুক্তি (যেমন: মৌসুমভিত্তিক কোটা)।
- চীনের মধ্যস্থতা: চীন-ভারত-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব।
৬. উপসংহার: তিস্তা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে
তিস্তা আজ শুধু একটি নদী নয়—এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই। এই লড়াইয়ে বিজয়ী হতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ। তিস্তার পানি যেন শুধু রাজনীতির হাতছানি না হয়, তা হয়ে ওঠে মানবতার মিলনস্থল।