ফেলানী হত্যার ১৪ বছর: একটি জাতির হৃদয়ে অমোচনীয় ক্ষত
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে ঘটে এক নির্মম ঘটনা। ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করে, এবং তার দেহ ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে। এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
ফেলানীর হত্যার সুবিচার আজও হয়নি। এই ঘটনা সীমান্ত সমস্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এটি শুধু একটি নিরীহ কিশোরীর হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে এক নির্মম আঘাত।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে সেই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক এবং কালো অধ্যায়ের জন্ম দেয়। ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুন তার বাবার সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তার ওপর গুলি চালায়। মুহূর্তেই নিথর হয়ে পড়ে সে। এরপর যা ঘটেছিল, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো মানবতার জন্যই ছিল এক অমানবিক লজ্জার অধ্যায়।
ফেলানীর প্রাণহীন দেহ ৪ ঘণ্টা ধরে সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে। একটি নিষ্পাপ কিশোরীর এই পরিণতি পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দেয়। সেই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলো ছিল মানবতার জন্য এক চরম অপমানের প্রতীক। সীমান্তে একটি দেশের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর এমন নিষ্ঠুরতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, এত বছর পরেও এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের কোনো সুবিচার হয়নি। ২০১৩ সালে ভারতের একটি আদালতে মামলা চললেও তা প্রহসনে পরিণত হয়। অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভারতের সরকারের নীরব ভূমিকা এবং সুবিচারের অভাব বাংলাদেশিদের মনে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
ফেলানীর মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি জীবন মূল্যবান। একটি দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে অন্য দেশের নাগরিকদের এভাবে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফেলানীর হত্যার সুবিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
ফেলানী, তুমি আজও আমাদের সংগ্রামের প্রেরণা। আমরা তোমাকে ভুলবো না এবং তোমার হত্যার ন্যায়বিচারের দাবিতে আমাদের কণ্ঠ অব্যাহত থাকবে।